Tuberculosis Miasm (Tuberculer) টিউবারকুলার মায়াজম, টিউবারকুলোসিস
ভূমিকাঃ
টিউবারকুলার মায়াজমের নিজস্ব কোন সত্ত্বা নেই। ইহা একটি মিশ্র মায়াজম। সোরার সঙ্গে সাইকোসিস বা সোরার সঙ্গে সিফিলিস কিংবা সোরার সঙ্গে সাইকোসিস ও সিফিলিস মায়াজম দুটির একত্রে মিলন ঘটলে তবেই টিউবারকুলার মায়াজমের সৃষ্টি হয়। নিজ অর্জিত সাইকোসিস বা সিফিলিসদোষের সঙ্গে সোরার মিলন ঘটলে সেই রোগীর জীবনে প্রকৃত টিউবারকুলার দোষের সৃষ্টি হয় না। বংশগতভাবে প্রাপ্ত সোরা, সাইকোসিস, সিফিলিস দোষের ফলেই টিউবারকুলার মায়াজমের সৃস্টি হয়। বংশগত সোরা সিফিলিসের ধারাটিই হলো টিউবারকুলোসিস।
পিতামাতার দেহে যদি সোরা ও সিফিলিসের মিলন ঘটে তবে সন্তানের দেহেও ঐ সংমিশ্রিত অবস্থাটি টিউবারকুলারদোষে রূপায়িত হয়। মহাত্মা হানেমান বলেছেন যে, বংশগতভাবে প্রাপ্ত দোষ চরম পরিণতির সুযোগ পায় অসদৃশপন্থার নানা প্রকারের চিকিৎসায়।
ডা. জেমস হেনরি এলেন বলেছেন যে, সোরার সঙ্গে সাইকোসিসদোষটি বংশগতভাবে প্রাপ্ত হলে যে টিউবারকুলার দোষটির উৎপত্তি ঘটে সেটিকে শুষ্কজাতীয় টিউবারকুলোসিস দোষ বলা হয়। এই জাতীয় টিউবারকুলোসিসের লক্ষ্যস্থল সাধারণতঃ ফুসফুস না হয়ে মাংস পেশি হয়। ইহা রোগীর দেহে ক্রমেই শীর্ণতা আনে। শিশুদের রিকেটস জাতীয় পীড়া বা ম্যারাসমাস-এই শ্রেণীভুক্ত রোগ।
অনেকের দেহে টিউবারকুলার দোষটি চিরকাল সুপ্ত অবস্থাতেই থাকতে পারে। যদি টিউবারকুলার দোষ জনিত কোন লক্ষণাবলীকে অসদৃশবিধানযুক্ত কোন চিকিৎসা দিয়ে চাপা দেয়া হয় তবে আর টিউবারকুলার দোষটি সুপ্তাবস্থায় না থেকে প্রকৃত টিউবারকুলোসিস প্রকাশ পায়।
এক নজরে টিউবারকুলার মায়াজমঃ
রোগীর মধ্যে অসন্তোষ, ক্রোধ, বিরক্তি, অসহিষ্ণুতা, চঞ্চলতা, পরিবর্তনশীলতা দেখা দেয়। এরপর আসে উদাসীনতা এবং সব শেষে আসে ধ্বংস।
সে সকল কাজ করলে, খাবার খেলে বিশেষ ক্ষতি করবে-সে সকল কাজ করে, সে সকল খাবারের প্রতি বিশেষ ঝোঁক থাকে।
ক্রমশ দুর্বলতা ও শুষ্কতা, ঘনঘন একই ধরনের শিরঃপীড়া/মাথা ব্যথা, বারংবার ঠান্ডা ও সর্দি লাগার প্রবণতা, বারংবার ইনফ্লুয়েঞ্জা, হুপিং কাশি, হাম প্রভৃতি রোগের আক্রমণ।
টিউবারকুলার দোষ থেকে মুক্ত করতে হলে শিশুকালই উপযুক্ত সময়। শিশুকালেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিলে টিউবারকুলার দোষ থেকে মুক্ত থাকা যায়। যৌবনকালেও হোমিও চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যায়। কিন্তু প্রৌঢ় অবস্থায় টিউবারকুলার দোষকে নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব। তথাপিও হোমিও চিকিৎসা নিলে ক্ষতিকর কিছু ঘটে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।
- চোখ দুটি কোটরাগত, মুখমন্ডল মলিন কিন্তু গাল দুটি ঈষৎ আরক্তিম।
- মাঢ়ী ও মুখ থেকে প্রচুর রক্তস্রাব।
- দাঁত ওঠার সময় অনেক প্রকার রোগের আক্রমণ।
- গাল ও গলার গ্রন্থি ফোলা।
- বারবার টনসিল প্রদাহ।
- যথেষ্ট ক্ষুধা থাকে, খায়ও প্রচুর-তথাপি ক্রমশ শুকিয়ে যায়।
- চঞ্চলতা ও পরিবর্তনশীলতা।
- অসন্তুষ্টির ভাব, অসহিষ্ণুতার ভাব।
- মানসিক এবং দৈহিক পরিবর্তশীলতা।
- নিত্য নতুন বস্তু পাবার আকাঙ্খা অথচ পরিতৃপ্তি আসে না।
- একের পর এক চাওয়া পাওয়া; একবার পেয়ে তা আবার ত্যাগ করে অন্য কিছু পাবার আকাঙ্কা।
- রোগ কঠিন, দুঃসাধ্য প্রকৃতির হয়-অথচ রোগী এ ব্যাপারে পরোয়া করে না ।
- রোগ আশঙ্কাজনক হলেও এ ব্যাপারে কোন উৎকন্ঠাই নেই রোগীর।
- গতি গঠনমুখী নহে, ধ্বংসমুখী।
- কুকুরের ভয়।
- সামান্যতম ঠান্ডাও সহ্য হয় না।
- দুগ্ধ সহ্য করতে পারে না।
- চর্বিযুক্ত এবং লবণাক্ত খাবার বেশি পছন্দ।
- চক, পেন্সিল, খড়িমাটি ইত্যাদি অখাদ্য দ্রব্য খেতে চায়, আকাঙ্খা থাকে।
- দাঁদ ও একজিমা থাকে।
- বিশ বছরের নিচের ছেলেদের চোখের তারা খুব প্রসারিত।
- শিশুদের প্রায়ই কানে পুঁজ হয়-যা দিনে ভালো থাকে রাতে বৃদ্ধি।
- শিশু নিদ্রাকালে চিৎকার করে কেঁদে উঠে।
- বুকটি অপ্রশস্ত ও সরু।
- বুকের উপর দিকটা সামান্য উঁচু-ঠিক যেন কবুতরের বুক।
- শিশু দেরীতে হাঁটতে শিখে।
- বয়স্ক লোক দ্রুত হাঁটতে পারে না।
- হাত পায়ের তলায় ঘাম।
- শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষমতার অভাব বা সামান্য পরিশ্রমে কান্তি।